ইসলামের চার খলিফার নাম কি? । চার খলিফার নাম ও জীবনী - Biographies of four khalifa

ইসলামের চার খলিফার নাম কি । চার খলিফার নাম

ইসলামের চার খলিফার নাম কি

ইসলামের চার খলিফার নাম কি? | চার খলিফার নাম - মহানবী (স) এর পরলোক গমনের পর শুরু হয় খিলাফত। খিলাফত বা Caliphate  ( আরবি থেকে خلافة or khilāfa) ছিল, সরকারের ইসলামি রুপ যা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক একতার প্রতিনিধিত্ব করে। 

এই ধরণের শাসন ব্যবস্থার সরকার প্রধানকে খলিফা বলা হয়। ইসলাম ধর্মমতে বলা হয় “খলীফাতুল রাসূলুল্লাহ বা Successor of Messenger of God  বা খলীফা (Caliph))”। তার তিরোধানের পরে ৪জন খলিফা শাসন করে গেছেন প্রায় সারা দুনিয়া। নিম্নে তাদের জীবনী তুলে ধরা হলো.

আরো পড়ুন:

►►  জীবন নিয়ে বিখ্যাত উক্তি 

►► বাংলা মাসের কত তারিখ আজ 

►► হাত কাটা পিকচার ডাউনলোড 

►► নতুন মোবাইল ফোনের দাম ২০২২

►► শুভ সকালের সুন্দর ছবি ও কবিতা

►► স্যামসাং নতুন মোবাইল ফোনের দাম 

৮ হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল ফোন

১২০+ মেহেদী ডিজাইন ছবি ও পিকচার

ইসলামের চার খলিফার নাম কি

ইসলামের চার খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফার নাম, ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফা, ইসলামের প্রথম খলিফার জীবনী, হযরত আবু বকর (রা:) এর

খিলাফত

চার খলিফার নাম - খোলাফায়ে রাশেদা বলতে ইসলামের প্রথম চার খলিফার শাসনকালকে বুঝানো হয়। ৬৩২ সালে (হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ হিজরি) নবী মুহাম্মদ-এর মৃত্যুর পর এই খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। 

সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হওয়ার পর এটি সমগ্র আরব উপদ্বীপ, লেভান্ট থেকে উত্তর ককেসাস, পশ্চিমে মিসর থেকে বর্তমান তিউনিসিয়া ও পূর্বে ইরানীয় মালভূমি থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি

ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি

হযরত আবু বকর (রা:) এর জীবনী

পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বনবির পর অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মাধুর্য ব্যবহার, ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা, অগাধ জ্ঞানের গভীরতা, কালজয়ী আদর্শিক একনিষ্ঠতা, কুরআনের নীতি-জ্ঞানে পরিপক্বতা, দায়িত্ব পালনে কর্তব্য-নিষ্ঠা, অধিকার বস্তবায়নে ত্যাগের মহিমা আর নিঃস্বার্থ প্রজা পালনে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যত রাষ্ট্রনায়ক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, 

তিনি হলেন ইসলামি খিলাফাতের প্রথম খলিফা, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি আশারায়ে মুবাশ্বারার একজন। সংক্ষেপে তাঁর পরিচয় তুলে ধরা হলো-

ইসলামের চার খলিফার নাম 

ইসলামের চার খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফার নাম, ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফা, ইসলামের প্রথম খলিফার জীবনী, হযরত আবু বকর (রা:) এর

জন্ম ও বংশ

তিনি আরবের ঐতিহ্যবাহী কুরাইশ বংশের বনু তাইম গোত্রে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের দুই বছরে কিছু বেশি সময় পরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছিলেন রাসুলের ইন্তেকালের পর একই ব্যবধানে। 

হজরত আবু বকর রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমান আয়ুষ্কাল লাভ করেছিলেন।

তাঁর বংশপরম্পরা ষষ্ঠ পুরুষে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধারায় মিলিত হয়। তাঁর নাম ছিল আবদুল্লাহ, কুনিয়াত বা ডাকনাম ছিল আবু বকর, উপাধি আতিক, সিদ্দিক ও খলিফাতুর রাসুল। 

তাঁর পিতার নাম ছিল উসমান আর ডাকনাম ছিল আবু কুহাফা। মাতার নাম ছিল সালমা আর কুনিয়াত ছিল উম্মুল খায়ের।


পরিচয়

হজরত আবু বকর ছিলেন বেশ সুদর্শন, ব্যবসায়ী, সচ্ছল, সামাজিক নেতৃত্বে মর্যাদাবান। কুরাইশ বংশের দলপতির একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণভাবে।

বিলাসিতার মধ্যে প্রতিপালিত হলেও তাঁর জীবনে জাহেলি যুগের নীতিহীনতা বা বর্বরতার কোনো স্পর্শ লাগেনি। তিনি কোনোদিন শিরক এবং মূর্তি পূজা করেননি। তিনি ছিলেন হানিফ ঘরানার প্রথম সারির ব্যক্তি। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাল্যসঙ্গী।

মাত্র বিশ বছর বয়সেই তাঁকে পারিবারিকভাবে বাণিজ্যের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ বাণিজ্য সফরেও তিনি ছিলেন সফরসঙ্গী। 

এমনকি যে সফরে সিরিয়া সীমান্তে খ্রিস্টান ধর্মযাজক বুহাইরা বা নাসতুরা বিশ্বনবিকে ‘নবি’ হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সে সফরেও তিনি বিশ্বনবির সফরসঙ্গী ছিলেন।

ইসলামের চার খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফার নাম, ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফা, ইসলামের প্রথম খলিফার জীবনী, হযরত আবু বকর (রা:) এর

বিশেষ মর্যাদা

তাঁর মধুময় ব্যবহার, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সচ্ছলতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা, পরোপকার, বিশ্বস্ততা, সচ্চরিত্র, জ্ঞান, মেধা ও পান্ডিত্যের কারণে তিনি ছিলেন মক্কাবাসী সবার শ্রদ্ধার পাত্র। অনেকে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনে আগ্রহী ছিল। তাঁর বাগ্মিতা ও কাব্য প্রতিভাও ছিল চমৎকার।


ইসলাম গ্রহণ

হানিফ ঘরনার অনন্য ব্যক্তি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেসালাত প্রাপ্তির দ্বিতীয় দিনেই ইসলাম গ্রহণ করেন। 

তিনিই হলেন বয়স্ক ও পুরুষদের মধ্যে এবং কুরাইশ বংশের ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। বাল্যকাল থেকেই বিশ্বনবির সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিশ্বনবির রেসালাত প্রাপ্তির পর সে সম্পর্ক আরো গভীর হয়।

তাঁর সৌভাগ্য

তিনি এ দিক দিয়েও সৌভাগ্যবান যে তাঁর মা-বাবা দুজনই ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সবাই ছিলেন মুসলমান। এক হাদিসে রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া সবার মধ্যে কিছু না কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ লক্ষ করেছি। 

তাঁর সৌভাগ্য যে, বিশ্বনবি প্রায়ই সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে যেতেন এবং যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। দ্বীনি দাওয়াত নিয়ে কোথাও গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সঙ্গে নিয়েই যেতেন।

আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম ২০২২

হিজরত

হিজরতের কঠিন সফরে হজরত আবু বকরই ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সফরসঙ্গী। খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহার ইন্তেকালের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে চরম মর্মবেদনা পেয়েছিলেন, হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা লক্ষ করেছিলেন। 

তাই তিনি তাঁর ছোট কন্যা হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিশ্বনবির সঙ্গে বিবাহ দেন এবং মোহরানার অর্থও নিজেই পরিশোধ করেন।

ইসলামের চার খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফার নাম, ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফা, ইসলামের প্রথম খলিফার জীবনী, হযরত আবু বকর (রা:) এর

যুদ্ধে অংশগ্রহণ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যতগুলো অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন, হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন প্রত্যেক অভিযানেই তাঁর সঙ্গী। নবম হিজরিতে প্রেরিত প্রথম ইসলামী হজ কাফেলায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমিরুল-হজ নিয়োগ করেন। 

এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তিম শয্যায় শায়িত অবস্থায় বিশ্বনবির নির্দেশে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাজে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।

সিদ্দিক উপাধি লাভ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাঁর এত নিখাদ বিশ্বাস ছিল যে, যখন মিরাজের ঘটনাকে কাফেরকুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছিল, যার ফলে কপট শ্রেণীর কিছু মুসলমান মুরতাদ হয়ে গেল এবং অনেক সাধারণ মুসলমানের মন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলছিল, 

তখন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করলেন, আল্লাহর কসম তিনি আল্লাহর রাসুল এবং তিনি সত্যই বলছেন, তিনি মিথ্যা বলতে পারেন না। 

কাফিরদের প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দ্বিধাহীন ও দৃঢ় ঘোষণার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন।

আরো পড়ুন: আমি কিভাবে অনলাইনে ইনকাম করবো

ইসলামের জন্য অকাতরে ব্যয়

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এ অবদান অসামান্য। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি প্রত্যেকটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। 

কিন্তু আবু বকরের ইহসান এমন যে আমি পরিশোধে অক্ষম। তাঁর প্রতিদান আল্লাহ দেবেন। তাঁর অর্থ আমার উপকারে যেমন এসেছে, অন্য কারো অর্থ তেমন আসেনি। তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাবেই কুরাইশ বংশের বিশিষ্ট যুবক উসমান, যুবাইর, আবদুর রহমান, সাদ, তালহাসহ আরো অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

 তিনি যখন ইসলাম কবুল করেন তখন তাঁর সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার দিরহাম। যার সম্পূর্ণটাই তিনি ইসলামের জন্য ব্যয় করেছেন।

ইসলামের চার খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফার নাম, ইসলামের প্রথম খলিফার নাম কি, ইসলামের চার খলিফা, ইসলামের প্রথম খলিফার জীবনী, হযরত আবু বকর (রা:) এর

নিজ অর্থে ক্রীতদাস মুক্তি

কুরাইশদের যে সব দাস-দাসী ইসলাম গ্রহণের কারণে চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন, তিনি তাদেরকে নিজ অর্থের বিনিময়ে কিনে মুক্ত করে দেন। হজরত বেলাল, খাব্বাব, আম্মার ও তাঁর মা সুমাইয়া, সুহাইব, আবু ফুকাইহসহ অনেকেই তাঁর অর্থের বিনিময়ে স্বাধীন জীবনের অধিকারী হয়েছিলেন।

তাঁর কুরআনের আয়াত নাজিল

আল্লাহ তাআলা তাঁর শানেই সুরা আল-লাইলের ৫, ৬ ও ৭ আয়াত নাজিল করেছিলেন। দযে ব্যক্তি দান করল ও তাকাওয়া অবলম্বন করল আর যা কিছু উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করল, তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ (জান্নাত)।

বিশ্বনবির ইন্তিকালের ঘোষক

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু একেবারেই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। রাসুলের মৃত্যু হতে পারে বিষয়টি তাঁদের ভাবনাতেই যেন ছিল না। 

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোষমুক্ত তরবারি হাতে ঘোষণা করলেন, যে বলবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন তাঁকে হত্যা করব। এমন অবস্থায় হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এগিয়ে গেলেন, স্থির চিত্তে তিনি ঘোষণা করলেন, 

যারা মুহাম্মদের ইবাদত করত তারা জেনে রাখো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করো তারা জেনে রাখো, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। অতঃপর তিনি সুরা আল-ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলেন, দমুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল ছাড়া আর কিছু নন। 

তাঁর আগে বহু রাসুল অতীত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তাহলে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে?দ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বক্তব্য শুনে সাহাবায়ে কেরাম সম্বিত ফিরে পেলেন এবং তাদের অবস্থা স্বাভাবিক হয়।

আরো পড়ুন: অনলাইন ইনকাম সাইট ২০২২

খলিফা নিযুক্ত

বিশ্বনবির দাফন সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে পরবর্তী দায়িত্বশীল নিয়ে মত-পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। যা হজরত আবু বরক অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ধীরস্থিরভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করে তাদের মত-পার্থক্য নিরসন করেন। তার বক্তব্যে আনসাররা মেনে নিলেন এবং তিনি সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামের প্রথম খলিফা নিযুক্ত হলেন। খোলাফায়ে রাশেদিনের মধ্যে একমাত্র তাঁকেই খলিফাতুর রাসুলুল্লাহ বলা হয়। 


খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বক্তব্য

খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এক সংক্ষিপ্ত ও নীতিনির্ধারণী বক্তব্য প্রদান করেন, যা চিরকাল বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলের প্রতি দুরুদ পাঠের পর বলেন-

‘আল্লাহর শপথ! আমি ইচ্ছা আপনাদের মধ্য থেকে কেউ এ গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করুন। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হলো।

যদি আপনারা চান আমার আচরণ রাসুলের আচরণের মতো হোক তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাকে অক্ষম মনে করবেন। কারণ তিনি ছিলেন নবী, সব ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত। আর আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি যদি সঠিক কাজ করি তাহলে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আর যদি দেখেন আমি বিপথগামীমুখী, তাহলে আমাকে সতর্ক করে দেবেন।

জাকাত আদায়ে কার্যকরী ভূমিকা

তিনি অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের সুযোগে আবাস ও জুবইয়ান গোত্রদ্বয় জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। 

বিষয়টি নিয়ে খলিফার দরবারে পরামর্শ সভা বসে। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু খলিফা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, রাসুলুল্লাহ জীবদ্দশায় উটের যে বাচ্চাটি জাকাত হিসেবে দেয়া হতো, এখন যদি কেউ সেটিও দিতে অস্বীকার করে তাহলেও আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।

মিথ্যা নবুয়তের দাবিদারদের বিরুদ্ধে অভিযান

বিশ্বনবির ইন্তেকালের পর কিছু সুযোগসন্ধানী লোক রমরমা ব্যবসার মানসে নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করে বসে। কিছু বেদুঈন সম্প্রদায় ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেষ্টা করে। 

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করে ইসলামী খেলাফতকে সংকটমুক্ত করেন। এ জন্য ঐতিহাসিকরা তাঁকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলে অভিহিত করেন।

কুরআনের পান্ডুলিপি সংরক্ষণ

তিনি ইসলামের সবচেয়ে বড় যে খেদমতটি করেছেন তা হলো, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা পবিত্র কুরআনের পান্ডুলিপিগুলো একত্রে করে একটি পূর্ণাঙ্গ কপি তৈরি করেন, যা মাসহাফে সিদ্দিকী নামে খ্যাত। আর এ মাসহাফে সিদ্দিকীই পরবর্তী সময়ে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলনে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ওফাত

৮ জুন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে  ২২ আগস্ট ৬৩৪খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ইসলামি খিলাফাত পরিচালন কারন। অবশেষে সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু  ১৫ দিন রোগভোগের পর ১৩ হিজরি ২২ জমাদিউস সানি মোতাবেক ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখ ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

জানাযা ও দাফন

হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর জানাজায় ইমামতি করেন। অতঃপর হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হুজরায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশে পূর্ব দিকে তাঁকে দাফন করা হয়। 

আরো পড়ুন: নিজের নামে রিংটোন ডাউনলোড

ইসলামের চার খলিফার নাম ( ২য় )

ইসলামের চার খলিফার নাম কি

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) এর জীবনী

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবাদের একজন। হজরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর শাসনামলেই খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। 

এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুইতৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকে প্রথম উমর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। তার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো-


বংশ ও জন্ম

আসল নাম ওমর, ডাক নাম আবূ হাফস। পরবর্তীকালে উপাধি পান ফারুক। বনু আদি গোত্রের সূর্যসন্তান খাত্তাব ছিলেন তাঁর বাবা এবং মায়ের নাম হানতামা, তিনি ছিলেন বনু মাখজুম গোত্রভূক্ত। হজরত ওমরের আম্মা কুরাইশ বংশের সেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি হিশাম ইবনে মুগীরার কন্যা। আব্বা আম্মা উভয়েই কুরাইশ বংশের লোক। তিনি ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।


প্রাথমিক জীবন

পড়া লেখার রীতি প্রচলিত না থাকলেও তিনি লিখা-পড়া শিখার পাশাপাশি সমরবিদ্যা, অশ্বারোহন ও কুস্তি শিখেন শৈশবেই। কুস্তিগীর, সুবক্ত এবং গোত্রের বিরোধ মিমাংশাকারী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। 

ব্যবসায়িক কাজে বাজেন্টাইন, সাসানীয় সম্রাজ্য সফরকালে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাত ও সামাজিক অবস্থার বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। 

৬১০ সালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করলে মক্কাবাসীর মত তিনিও প্রথম পর্যাযয়ে ইসলামের বিরোধীতা করেছিলেন। কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করে এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ বিবেচনায় তার হাতে মুসলিমরা নির্যাতিতও হয়। এক পর্যায়ে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও হত্যা করতে চেয়েছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ

তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ছিল আকস্মিক ও অত্যন্ত হৃদয় গ্রাহী। আসলে ওমর প্রকৃতিগত দিক থেকেই ছিলেন অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির মানুষ। যখন তিনি জানতে পারলেন বোন ফাতিমা, ভগ্নিপতি এবং চাচাতো ভাই যায়িদ, দাসী লাবিনা এমন কি তার বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বন্ধু নাঈম ইবন আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তখন তিনি স্বাভাবিক ভাবেই মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। 

যাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করতেও বাঁধেনি তাঁর। কিন্তু আপন সহোদরার সমস্ত শরীর এবং মুখ যখন রক্তাক্ত দেখেছেন তখন আর নিজেকে জাহেলিয়াতের ওপর মজবুত রাখতে পারেননি। 

মুহুর্তের মধ্যে মন থেকে শিরকের সমস্ত কালিমা উবে গেলে তিনি সত্যের বর্ণালী আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলেন। সংগে সংগে সহোদরা ফাতিমার নিকট থেকে সূরা ‘তাহা’র লিখিত অংশটুকু নিয়ে পড়লেন, আর স্বাগত বলে উঠলেন, ‘তোমরা আমাকে রাসূলের কাছে নিয়ে চলো।’ 

তাইতো তিনি ৬১৬ সালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদ মোবারকে তাঁর তলোয়ার বিসর্জন দিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি নিজেই আবু জাহলকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর জানান।

আরো পড়ুন: টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়

ওমর হলেন আল-ফারুক

তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, দদহে আল্লাহর রাসূল! বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, দদতোমাকে নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটাই যথেষ্ট। 

আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করবো। ভরসা মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না। সেদিনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে "ফারুক" উপাধি দেন।


হিজরত

মক্কায় নির্যাতনের কারণে এবং মদিনা থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসায় অধিকাংশ ব্যক্তিই ধরা পড়ার ভয়ে রাতে মদিনায় হিজরত করতে থাকে। কিন্তু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সাঈদ ইবনে যায়িদকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মদিনায় হিজরত করেন।

যুদ্ধ-বিগ্রহ

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবিত থাকা পর্যন্ত এবং জীবনে সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বদর থেকে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত সব যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন।


খিলাফত লাভ

হজরত আবূ বকরের ইন্তেকালের আগেই তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে খলিফা নির্বাচিত করা হয়। তাঁর শাসনকাল এখনো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসাবে স্বীকৃত। ‘দশ বছরের স্বল্প সময়ে গোটা বাইজান্টাইন, রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। 

তাঁর যুগে বিভিন্ন অঞ্চলসহ মোট ১০৩৬ টি শহর বিজিত হয়। ইসলামী হুকুমাতের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা মূলত তাঁর যুগেই হয়। সরকার বা রাষ্ট্রের সকল শাখা তাঁর যুগেই আত্ম প্রকাশ করে। 

তাঁর শাসন ও ইনসাফের কথা সারা বিশ্বে মানুষের কাছে কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে আছে। যিনি তাঁর প্রজা সাধারণের অবস্থা দেখার জন্য রাতের অন্ধকারে মহল্লায় মহল্লায় ছুটে বেড়াতেন। 

নিজে পিঠে করে খাদ্যের বস্তা অভূক্তদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। দুধ বিক্রেতা সত্যবাদিনী যুবতীকে নিজের পুত্রবধু হিসাবে বরণ করে নিয়েছেন। খৃষ্টান শাসকের আমন্ত্রণে জেরুযালেম যাওয়ার সময় উটের রাখালকে পর্যায়ক্রমে উটের পিঠে উঠিয়ে নিজের রাখাল হিসাবে উটের রশি টেনে নিয়ে এগিয়ে গেছেন। অর্ধ দুনিয়ার বাদশাহ হয়েও নিজের রুটি রুজির জন্য ব্যবসাপাতি করেছেন।

ইন্তেকাল

দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী ৬৩ বছর বয়সে হিজরী ২৩ সনের ২৫ শে জিলহজ সোমবার ফজরের নামাযরত অবস্থায় আবূ লুলু ফিরোজ নামে মুগীরা ইবন শুবার অগ্নি উপাসক দাস তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। 

আহতাবস্তায় ৩ দিন অতিবাহিত করেন। দশ বছর ছয় মাস চার দিন খিলাফতের দায়িত্ব পালনের পর মুসলিম দুনিয়ার আমিরুল মুমিনিন বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।

ইসলামের চার খলিফার নাম ( ৩য় )

হযরত ওসমান (রা:) এর জীবনী

চার খলিফার নাম

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর যাঁরা ইসলামকে আল্লাহর জমিনে সুন্দরভাবে উম্মাহর সামনে পেশ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে হজরত ওসমান অন্যতম। তিনি ছিলেন ইসলামে তৃতীয় খলিফা। 

যেমন ছিলেন দানশীল, তেমনি ছিলেন লজ্জাশীলতায় সর্বকালীন দৃষ্টান্তের মূর্তপ্রতীক। সর্বোপরি আল্লাহর বিধানের প্রতি ছিলেন সুগভীর অনুরক্ত।তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-

জন্ম ও পরিচয় : 

মক্কায় হস্তিবাহিনীর আক্রমণের ছয় বছর পর হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ৫৭৩ মতান্তরে ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কার ঐতিহ্যবাহী কুরাইশ বংশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। 

তাঁর উপনাম ছিল আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা। তাঁর বাবা ছিলেন আফফান এবং আরওয়া বিনতে কুরাইশ ছিলেন তা মা। তিনি কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা শাখার সন্তান ছিলেন। তার উর্ধ্ব পুরুষ (৫ম স্তরে) আবদে মান্নাফে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

প্রাথমিক জীবন : 

অত্যন্ত সুদর্শন হজরত ওসমানের জীবনের প্রাথমিক ইতিহাস খুব সামান্যই সংরক্ষিত আছে। যতটুকু জানা গেছে, জাহিলি যুগে জন্ম হলেও জাহিলিয়্যাতের বীভৎসতা তাঁর চরিত্রকে বিন্দুমাত্র কলুষিত করতে পারেনি। 

ইসলাম গ্রহণের আগে হানিফ আঙ্গিনার লোকদের মধ্যে তিনি ছিলেন আরবের মুষ্টিমেয় শিক্ষিতদের একজন এবং কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তিবিদ্যাবিশারদ। বংশীয় আভিজাত্যের ধারায় যার যৌবন কেটেছে ব্যবসায়। 

তাইতো তিনি সর্বোচ্চ সততা ও বিশ্বস্ততার দরুন পেয়েছিলেন অল্প সময়েই অসাধারণ সাফল্য।


ইসলাম গ্রহণ : 

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উৎসাহে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স ত্রিশের কোটায়। তিনি নিজেই বলেছেন, দআমি ইসলাম গ্রহণকারী চারজনের মধ্যে চতুর্থ।দ হজরত আবু বকর, হজরত আলী ও জায়েদ বিন হারিসের পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 

কুরাইশ বংশের অত্যন্ত সম্মানিত ও বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কাফিরদের অমানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাঁর চাচা ‘হাকাম ইবনে আবিল আস’ ইসলাম ত্যাগের জন্য তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করত আর বলত, যতক্ষণ ইসলাম ত্যাগ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে ছাড়া হবে না।

বিবাহ : 

ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কন্যা রুকাইয়্যার সঙ্গে তার বিয়ে দেন। দ্বিতীয় হিজরিতে তাবুক যুদ্ধের পরপর হজরত রুকাইয়্যা মারা গেলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয় কন্যা হজরত উম্মে কুলসুমকে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেন। এ কারণেই তাঁকে ‘যুন্নূরাইন’ও বলা হয়।

হিজরত : 

সীমাহীন নির্যাতনে জর্জরিত মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হজরত উসমান এবং রুকাইয়্যা ছিলেন প্রথম হিজরতকারী মুসলিম পরিবার। তারা প্রথম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। 

তারপর হাবশায় দুই বছর অবস্থানের পর তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। সে কারণে তাঁকে দযুল্হিজরাতাইন’ও বলা হয়।

উপাধি ও বৈশিষ্ট্য : 

দুনিয়াতেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ। ব্যবসায়ী ওসমান বিপুল ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের কারণে দগনিদ উপাধি লাভ করেন। এছাড়া তিনি যুন্নূরাইন এবং যুল্হিজরাতাইন উপাধিতেও ভূষিত ছিলেন। 

গভীর মমতা, সহনশীলতা, আত্মমর্যাদাবোধ, দান ও লজ্জা ছিল তাঁর মহৎ চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যার ফলে সেই ৬ জন সাহাবির মধ্যে অন্যতম তিনি, যাদের উপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমরণ সন্তুষ্ট ছিলেন।

যেভাবে খলিফা হলেন : 

ছুরিকাহত হয়ে হজরত ওমর মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন সময়ে মৃত্যুর পরবর্তী তিনেদিনের মধ্যে খলিফা নির্বাচনের জন্য হজরত আলী, হজরত ওসমান, হজরত আবদুর রহমান, হজরত সাদ, হজরত তালহা ও হজরত যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এ ছয়জনের নাম ঘোষণা করে যান। 

তাঁরা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবা। খলিফা নির্বাচনী সভায় এ ছয়জনের মধ্যে ছয়টি ভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়। অবশেষে হজরত যুবাইর হজরত আলীকে সমর্থন করেন। হজরত তালহা হজরত ওসমানকে সমর্থন করেন। 

হজরত সাদ হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফকে সমর্থন করে প্রথম দিনের বৈঠক শেষ করেন।

ইতোমধ্যে হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফের পেরেশানি বেড়ে গেল। তিনি হজরত আলীর কাছে গিয়ে হজরত আলীকে খলিফা ঘোষণার প্রস্তাব করেন। পরবর্তী দিন সম্পদ ও সম্মানের প্রতি ভিত, বিনম্র ও শ্রদ্ধাশীল হজরত আলী ঘোষণা দিলেন- খিলাফতের গুরুদায়িত্ব আমার জন্য অনেক বড় বোঝা। 

পাণ্ডিত্য ও তাকওয়ার অধিকারী হজরত ওসমানই খিলাফতের যোগ্য উত্তরসূরি। তিনিই আমাদের খলিফা। তিনিই হজরত ওমরের উত্তরসূরি। পরে সবাই তার হাতে বাইআত গ্রহণ করেন।

শাসনামল : 

বিপুল ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিক হজরত ওসমান মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি মসজিদে নববিতে মাথার নিচে চাদর দিয়ে শুয়ে থাকতেন। মানুষের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মতো কথা বলতেন।

তাঁর শাসনামলের প্রথমদিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য অর্জিত হয়। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলী সমাজের আদল পরিবর্তন করে দিয়েছিল। 

তিনি মদিনা শহর রক্ষায় দমাহরুদ বাঁধ নির্মাণ করেন। কৃষিতে উন্নতির জন্য খাল খনন করেন। পয়ঃপ্রণালী ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ  মসজিদে নববির আধুনিকায়ন করেন তিনি। মদিনার ঘরে ঘরে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তাঁর সময়ে ইসলামী খিলাফত পূর্বে কাবুল ও বেলুচিস্তান এবং পশ্চিমে ত্রিপলী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। তিনি প্রথম নৌবাহিনী গঠন করে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপপুঞ্জ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাঁর সময়েই বাইজান্টাইন ও পারস্য শক্তির ঔদ্ধত্য নির্মূল করা হয়।

  • কুরআন সংকলন : 

বিশ্ব মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় অবদান পবিত্র কুরআন সংকলন তিনিই করেছিলেন। হজরত হাফসার তত্ত্বাবধানে একটি উপযুক্ত কুরআন সংরক্ষণ কমিটি গঠন করে কুরআনের হিফাজতের দায়িত্ব দেন।

দানশীলতা : সমাজের দারিদ্র্য ও অসহায় মানুষের প্রতি হজরত ওসমান ছিলেন সর্বদা মুক্তহস্ত। মদিনায় বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মদিনার ব্যবসায়ীরা হজরত ওসমানের বাড়িতে ভিড় জমান। 

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, দতোমরা আমাকে কী লাভ দেবে?দ তাঁরা ১০ টাকা ক্রয় মূল্যের ওপর দুই টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ টাকা পর্যন্ত দিতে সম্মত হলেন। হজরত ওসমান বললেন, আমি দশে দশ লাভ পেতে পারি।

অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি সব খাদ্যশস্য মদিনার অভাবি লোকদের সদকা করে দিলাম।দ এভাবে সমাজের ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অভাব দূর করতে তিনি তাঁর বিপুল ঐশ্বর্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হিরাক্লিয়াস মদিনার বিরুদ্ধে লক্ষাধিক সৈন্যের এক সুসজ্জিত বাহিনী প্রেরণ করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ প্রস্তুতিতে তহবিল সংগ্রহের ঘোষণা দেন, সে সময় হজরত ওসমান এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা, এক হাজার উট ও ৭০টি ঘোড়া সরবরাহ করেন।

বন্ধু ওসমান : 

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হজরত ওসমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। 

মানবতার কল্যাণে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গকারী এ সাহাবি সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দউসমান হলো তাঁদেরই একজন, যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বন্ধু ভাবেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও ওসমানকে বন্ধু ভাবেন।দ তাইতো হজরত উম্মে কুলসুম মারা যাবার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 

আমার যদি আরো একটি মেয়ে থাকত, তাহলে তাকেও আমি ওসমানের সঙ্গে বিয়ে দিতাম। একাধিকবার জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ওসমান সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, দপ্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে ওসমান।


ওফাত :

 খলিফার সরলতা, সহিষ্ণুতা ও উদারতার সুযোগে স্বার্থান্বেষী চক্র হজরত ওসমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, দআল্লাহ পাকের হিকমতানুসারে জুন্নুরাইনের ওপর মতানৈক্য দেখা দেবে এবং লোকেরা তাঁকে শহীদ করবে। অথচ তিনি তখন হকের ওপরই থাকবেন এবং তাঁর বিরোধীরা থাকবে বাতিলের ওপর।

রক্তপাতের সম্পূর্ণ বিরোধী হজরত ওসমানকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন হিজরি ৩৫ সনের ১৮ জিলহজ্জ শুক্রবার আসরের নামাজের পর ৮২ বছর বয়সে বর্বরভাবে হত্যা করা হয় (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

তিনি ১২ দিন কম ১২ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম তাঁর জানাজায় ইমামতি করেন। জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।

ইসলামের চার খলিফার নাম ( চতুর্থ )

ইসলামের চার খলিফার নাম

হযরত আলী (রা:) এর জীবনী

মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলিফা ছিলেন হযরত আলী (রা.)। তাঁর পিতা আবু তালিব ছিলেন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিমের পুত্র । আলী (রা.) এর ডাক নাম আবু তুরাব। তিনি নবীজী (সা.) এর কন্যা ফাতিমা (রা.) কে বিবাহ করেন। তাঁর মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ ইবন হাশিম ।


হযরত খাদীজা (রা.) এর পরে তিনি প্রথম মুসলিম; আবুযার, আল মিকদাদ, আবু সাইদ আল খুদরী (রা.) প্রমুখের মতে বুরায়দা ইবনিল হুসায়ব (রা.) অথবা তিনি দ্বিতীয় মুসলিম । 

হযরত (সা.) যে দশজনকে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবেন বলে স্পষ্টভাবে সুসংবাদ প্রদান করেন, তিনি তাদের অন্যতম। উমার (রা.) কর্তৃক তাঁর মৃত্যুশয্যায় মনোনীত ছয়জন নির্বাচকেরও তিনি ছিলেন অন্যতম ।

ইসলামের চার খলিফার নাম ( চতুর্থ )

হযরত আলি (রা.): এর জীবনী

পূর্ণ নাম : আলী ইবনে আবু তালিব

জন্ম: অক্টোবর ২৩, ৫৯৮// মার্চ ১৭, ৫৯৯ // মার্চ ১৭, ৬০০ (একেক জায়গায় একেক রকমের দেওয়া, তাই তিনটাই উল্লেখ করা হলো)।

পিতা: আবু তালিব

মাতা: ফাতিমা বিনতে আসাদ

স্ত্রী: হযরত ফাতিমা (রা.)

সন্তান: ইমাম হাসান , ইমাম হোসাইন, জয়নাব

রাজত্বকাল: ৬৫৬–৬৬১

পূর্বসূরী: হযরত ওসমান (রাঃ)

উত্তরসূরী: ইমাম হাসান (রাঃ)

মৃত্যু: জানুয়ারি ২৮, ৬৬১

প্রাথমিক জীবন:

হযরত আলী (রা.) এর বয়স ছিল তখন প্রায় ২২ বছর । আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইয়াছরিবে হিজরত করার শেষ রাতে শত্রুদের চোখের সামনে দিয়ে নিরাপদে গৃহ ত্যাগ করলেন। যাওয়ার সময় হযরত আলী (রা.) কে আমানতের গচ্ছিত সম্পদ প্রদানের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। প্রত্যুষে শত্রুপক্ষ দেখল, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বিছানায় ছেড়ে হযরত আলী (রা.) নিশ্চিন্ত মনে শুইয়া আছে।

হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে হযরত (সা.) এর প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রা.) এর সাথে আলী (রা.) এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় হযরত ফাতেমা (রা.) এর বয়স ছিল ১৪ বছর এবং হযরত আলী (রা.) এর বয়স ছিল ২২ বছর। (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, এসাবা, খোলাফায়ে রাশেদিন)। 

তিনি বদর, উহুদ ও খন্দক(পরিখা)-এর যুদ্ধে যোগদান এবং তাবূক ছাড়া অন্য সমস্ত অভিযানে নবীজী (সা.)-এর সঙ্গে গমন করেন। তাবূক অভিযানের সময় নবীজী (সা.) এর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবার-বর্গের তত্ত্বাবধান এবং মদিনার শাসনভার তাঁর উপর ন্যস্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে তিনি ষোলটি আঘাতপ্রাপ্ত হন; তাঁহার প্রচণ্ড আক্রমণে খায়বারের দুর্জয় কা’মূস দূর্গের পতন ঘটে ।


নবীজী (সা.) এর উপর নবম সূরা (আল বারা’আঃ বা আত-তাওবা) অবতীর্ন হওয়ার অল্প পরে উহার প্রথম তেরটি আয়াত হাজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করার জন্য নবীজী (সা.) তাকে প্রেরণ করেন । দশম হিজরি, মুতাবিক ৬৩১-৩২ সনে আলী (রা.) ইয়ামানে এ প্রচার সফরে গমন করেন । ইহারই ফলে হামাদানীরা ইসলাম গ্রহণ করে।

এলেমের দরজা:

নবীজী (সা.)-এর কোলে যিনি লালিত-পালিত হয়েছিলেন, নবীজী (সা.)-এর মুখে যিনি কোরআন পাক শ্রবণ করেছেন, নবীজী (সা.) এর কাছেই যিনি কুরআন শিক্ষা লাভ করেছেন এবং বুঝেছেন, তাঁহার এলম সম্পর্কে আর কাহার এলেমের তুলনা করা যেতে পারে? রানবীজী (সা.) ফরমাইয়াছেন, “আমি এলেমের শহর এবং আলী উহার দরজা। এই কাড়নের সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী (রা.) অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ।


খলিফা নির্বাচন:

হযরত উসমানের (রা.) শহীদ হওয়ার পর মদিনাতে একটি সর্বব্যাপী বিশৃংখলা এবং নৈরাজ্য বিরাজ করছিল।পাঁচ দিন যাবত রাজনৈতিক ডামাডোলের পর, মিসরীয় বিদ্রোহীদের নেতা, ইবনে সাবা, হযরত আলী (রাঃ)-এর পক্ষে এই বলে রায় দেয় যে, 

তিনিই একমাত্র খলিফা হওয়ার অধিকারী কারণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যার সপক্ষে একটি ওসিয়্যত করেছিলেন।২৩শে জুন ৬৫৬ খ্রীস্টাব্দে, হযরত উসমানের (রাঃ) মৃত্যুর ছয় দিন পর, হযরত আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হন এবং জনগণ তাঁর হাতে একে একে বয়'আত গ্রহণ করেন।।

হযরত আলি (রাঃ) এর শাসনকাল:

খেলাফতের নির্বাচনের পরপরই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী, মদীনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন, যা ছিল অধিকতর কেন্দ্রীয় একটি স্থান।তাঁর নির্বাচনের পরপরই তিনি জনগণের বিশেষ করে মহানবী (সাঃ) এর প্রভাবশালী সাহাবী যেমন হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর উত্থাপিত 'হযরত উসমান(রাঃ)-এর হত্যাকারীদের যথাশীঘ্র শাস্তির জনপ্রিয় দাবীর সম্মুখিন হন। 

হযরত আলী(রাঃ) ঘোষণা করেন যে, তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি- শৃংখলা পুনঃস্থাপন করা এবং কেবল তারপরই তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। কিন্তু হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ), হযরত আলী(রাঃ) এর এই সিদ্ধান্তে রাজী হননি; তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ), যিনি প্রকৃত অবস্থা অবগত ছিলেন না, তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর সাথে যোগ দেন। 

তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে এক সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন।হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়াতে যারপরনাই চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তাঁর এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, যদিও, হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং অন্য কোন শত্রুর দ্বারা নিহত হন।


হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয় কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তাঁর ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রাঃ) এর রক্ষাবেষ্টনীতে তাঁকে মদীনায় প্রেরণ করেন। 

এটি 'উটের যুদ্ধ' নামে খ্যাত; কারণ হযরত আয়েশা(রাঃ) যুদ্ধের সময় উটের উপর সওয়ারী ছিলেন। পরবর্তীতে, হযরত আয়েশা (রাঃ) জীবনভর হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্তা ছিলেন।

উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে, যিনি তখনও তাঁর হাতে বয়'আত গ্রহণ করেননি, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর নিকট আত্বসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এই অজুহাতে তাঁর নিকট নিজেকে সমর্পণ করেনি যে, হযরত উসমান(রাঃ) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন, তার রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে।

আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ), আমর বিন আস (রাঃ) এর সহায়তায়, সৈন্য প্রস্তত করা শুরু করে। হযরত আলী (রাঃ), অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে, মুয়াবিয়ার সাথে লড়ার জন্য সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হতে হয়। ৫৬৭ খ্রীস্টাব্দের জুলাই এ দুই সৈন্য বাহিনী 'সিফফিনে' যুদ্ধে উপনীত হয়। 

দু'পক্ষেই ব্যাপক হতাহত হয়; কিন্তু যুদ্ধ এই মতৈক্যে শেষ হয় যে, বিষয়টি একটি মধ্যস্থতা কমিটিতে নিষ্পত্তি হবে। এই কমিটিতে হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষে আবু মুসা আল আসরি (রাঃ) এবং আমীর মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস (রাঃ) প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই মধ্যস্থতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, কারণ আমর বিন আস (রাঃ) আবু মুসা আল আসরি (রাঃ)-এর সাথে গ্রহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়াঁয়।

একটি বড় দল, যারা মধ্যস্থতার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল, হযরত আলী (রাঃ) থেকে সরে গিয়ে তাদের জন্য এক নতুন আমীর নির্বাচিত করে নেয়।এই দলটিকে 'খারেজী' অর্থাৎ'ব্যতান্ত্রিক' বলা হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম, হযরত আলী (রাঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে রাজি করেনোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তা নিস্ফল হয়; যা ভয়াবহ যুদ্ধে মোড় নিলে প্রচুর খারেজী নিহত হয়।

এই বিপর্যস্ত পরাজয়ের পর খারেজীরা হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এবং আমর বিন আস (রাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তী দু'জন হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে যেতে সক্ষম হলেও হযরত আলী (রাঃ) ফযরের নামাজের জন্য মসজিদে যাবার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। 

দু'দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলীফা ৪০ হিজরীর ২০ রমযানে পরলোক গমন করেন। এই সময়ে তাহার ৩৭ বত্সর বয়সী বড় ছেলে আল হাসানকে (রাঃ) ইমামতি হস্তান্তর করেন৷নিঃসন্দেহে, হযরত আলী (রাঃ) খেলাফতের পবিত্রতা এবং মর্যাদা রক্ষার খাতিরে তাঁর জীবন কুরবান করেন।তিনিও সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

মৃত্যুর পূর্বকালীন ঘটনা ও মৃত্যু:

মুসলমানরা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কথা বিস্মৃত হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ ও একে অন্যকে হত্যার নেশায় মেতে ওঠে। ফলে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে উষ্ট্রের যুদ্ধ ও ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিফ্ফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

গৃহযুদ্ধে রাসুল (সা.) কর্তৃক প্রত্যয়িত তালহা, যুবাইর ও অনেক বয়োবৃদ্ধ সাহাবাসহ লক্ষাধিক মুসলমান নিহত হন। কার্যত ইসলামী খেলাফত অত্যন্ত দ্রুত অন্তিম সময়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

সিফ্ফিনের যুদ্ধের পর 'দুমাতুল জানদালে' ইসলামী খেলাফতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বৈঠককালে ১২ হাজার সৈন্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী খলিফার পক্ষ ত্যাগ করে। ইসলামে 'খারেজি' নামে উগ্রপন্থী সম্প্রদায়ের উদ্ভব তাদের থেকেই।

খারেজি সম্প্রদায় মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় শত্রু হিসেবে হজরত আলী, মুয়াবিয়া ও আমর ইবনুল আস (রা.)কে চিহ্নিত করে তাঁদের একই দিন ও অভিন্ন সময়ে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

আসন্ন মাহে রমজানের ১৫ তারিখ ফজরের নামাজের সময় আক্রমণ পরিচালনার সময় নির্ধারিত হয়। আততায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে বয়োবৃদ্ধ তিন সাহাবির ওপর হামলা করে।

সৌভাগ্যক্রমে আমর ইবনুল আস (রা.) অসুস্থতার কারণে সেদিন মসজিদেই যাননি। আর মুয়াবিয়া (রা.) আততায়ীর আক্রমণে সামান্য আহত হলেও বেঁচে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হজরত আলী (রা.) ৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শাহাদাৎ বরণ করেন। 

তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তাঁর জানাজায় ইমামতি করেন এবং কুফা জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

সরলতা ও আত্দত্যাগের প্রতীক ছিলেন হজরত আলী (রা.)। মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েও নিজ হাতে তাঁকে ও ফাতেমা (রা.)কে কাজ করতে হতো। দাস-দাসী কোনো দিনই তাঁর ঘরে ছিল না। 

ইতিহাসবিদ হিট্টি বলেছেন, 'আলী (রা.) ছিলেন যুদ্ধে সাহসী, পরামর্শদানে বিজ্ঞ, বক্তৃতায় স্বচ্ছ, সাবলীল, বন্ধুদের প্রতি অকপট এবং শত্রুদের প্রতি দয়াশীল। আলী (রা.) মাহাত্দ্য ও শৌর্য-বীর্যের নিদর্শনস্বরূপ ছিলেন।'

মাসুদী বলেন, 'আল্লাহ তাঁহাকে যে গুণাবলি দ্বারা ভূষিত করেন, তাঁহার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী (একমাত্র রাসুলে কারিম ছাড়া) অন্য কারো মধ্যে আমরা খুঁজিয়া পাইব না।' বস্তুত হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের মাধ্যমে খোলাফায়ে রাশেদিনের সমাপ্তি ঘটে।

ইসলামের ৪ জন খলিফা হলেন:১.হযরত আবু বকর (রাঃ),২.হযরত উমর (রাঃ), ৩.হযরত উসমান (রাঃ),৪.হযরত আলী (রাঃ)।এই চার জন খলিফা ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩০ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।     



আরো পড়ুন:

►► জীবনে ব্যর্থতার কারণ

►► কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়

►► অনলাইন আয়ের সাইট 2022

অনলাইনে গল্প লিখে টাকা আয়

কিভাবে ফেসবুক পেজ খুলতে হয় 

সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে করনীয়?

মোবাইল ফোনের দাম 2022

►► অনলাইনে ইনকাম করার উপায়

বিবেকানন্দের শিক্ষামূলক বাণী

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস শাখা 



Trick Bangla 24

স্বীকারোক্তিঃ এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্যই দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। যেহেতু কোন মানুষই ভুলের ঊর্দ্ধে নয় সেহেতু আমাদেরও কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকতে পারে। সে সকল ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনার নিকট দৃশ্যমান ভুলটি আমাদেরকে নিম্নোক্ত মেইল / পেজ -এর মাধ্যমে অবহিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ই-মেইলঃ trickbangla024@gmail.com

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন